তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক: মধ্যেপ্রাচ্য দেশ লেবাননে এবার একসঙ্গে ওয়াকিটকি ও পেজার ডিভাইসে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত ওয়াকিটকি ও পেজার ডিভাইসে সিরিজ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে ৩০০ জনের বেশি মানুষ আহত ও প্রাণ হারিয়েছে ৯ জন। অপরদিকে হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজার পেজার ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ঘটনায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১২ জন। আহত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষ।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণের পর লেবাননে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ ভয়ে এখন হাতের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন না। পেজার বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। প্রায় ৫ মাস আগে লেবাননে আসা এসব পেজারে বিস্ফোরক স্থাপন করে দিয়েছিল মোসাদ। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াকিটকিতে একই কায়দায় বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়েছিল। নতুন করে ওয়াকিটকিতে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে এটি হিজবুল্লাহর জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। এ মুহূর্তে হিজবুল্লাহর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
স্কাই নিউজ সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, যেসব পেজার বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়। লেবাননে যাওয়ার আগে এ ডিভাইসগুলো মোসাদের হাতে এসেছিল। এরপর সেগুলো তারা লেবাননে পাঠায়। এরমধ্যে তারা ডিভাইসটির ব্যাটারির উপর অত্যন্ত উচ্চ বিস্ফোরক পিইটিএন স্থাপন করে দেয়। এরপর দূর থেকে ব্যাটারির তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে ডিভাইগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর কয়েকজন যোদ্ধা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের আগে তাদের পেজারগুলো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর ডিভাইসগুলো সারাদেশে বিস্ফোরিত হওয়া শুরু করে।
কাতারের সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরা সূত্র জানিয়েছে, ডিভাইসগুলোতে যে বিস্ফোরক স্থাপন করা হয়েছে সেগুলোর ওজন ২০ গ্রামের মতো। আর যে সব পেজার বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো পাঁচ মাস আগে লেবাননে যায়। দূর থেকে কীভাবে এসব ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটানো হলো সেটি তদন্ত করা হচ্ছে।
সারাবিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি অকল্পনীয় উন্নয়ন: তথ্য প্রযুক্তির নিত্য উত্কর্ষতার দাক্ষিণ্যে পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বিজ্ঞানীদের নিত্যনতুন আবিষ্কারে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে আমাদের জগত। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে গতানুগতিকতা, বিবর্তন ঘটছে মানুষের জীবনধারায়। মানুষের জীবন সহজ, আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে তথ্য প্রযুক্তি অবদান রাখছে বড়মাত্রায়। জীবনের মুখ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রযুক্তি। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তির খোঁজ করে চলেছেন। কিছু প্রযুক্তির উত্কর্ষ মানুষের কল্পনাকে ছাপিয়ে গেছে। প্রতি দশকে মানুষের প্রাযুক্তিক উন্নয়ন বিস্ময় সৃষ্টি করছে। ডিজিটাল হয়ে উঠছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহাবিশ্বের প্রায় সবকিছু। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ইতিহাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। এখন বিশ্বের উন্নয়নের ধারনা বদলে গেছে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যে দেশে যত বেশি সে দেশ তত বেশি উন্নত।
মহাকাশজুড়ে কয়েক হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর দৃশ্যপট বদলে দেওয়ার মহানায়ক। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপড, ট্যাব, অ্যাপল, অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মোবাইল অ্যাপ, রোবট, ড্রোন, মোবাইল ব্যাংকিং,অনলাইনে কেনাকাটা, রাইড, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, ফিসিং প্রযুক্তি ও বহু অভিনব প্রযুক্তি বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে। অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের জয়জয়কার চলছে। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত পত্র-পত্রিকা প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে অনলাইনে প্রবেশ করেছে। আইফোন হ্যান্ডসেট হাতের মুঠোয় পুরে দিয়েছে আস্ত একটি কম্পিউটার।
আমাদের দেশেও দিন দিন বাড়ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে আজকের প্রজন্ম। গোটা দুনিয়াটাকে অনুমিত হচ্ছে হাতের মুঠোয় মার্বেলের চেয়ে ছোট কিছু। হাতে অপার প্রযুক্তির সৃষ্টির সম্ভার। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী শহর চলছে প্রযুক্তির হাত ধরে। অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবন যাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সমপ্রসারণ হচ্ছে ব্যাপক হারে। স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত সবার জীবন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। আগে অজপাড়া গাঁ বলতে যা বুঝানো হতো তা এখন আর দেখা যায় না গ্রামাঞ্চল। ঘরে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আগামী বছরগুলোতে এ গতি আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে।
মোবাইল ফোন যবনিকা ঘটিয়েছে চিঠি-ঘড়ি-টর্চলাইট যুগের। টেরিস্টরিয়াল বা ডিস লাইনে টিভির পতন ঘটাচ্ছে তারহীন ডিটিএইচ। অললাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিংয়ের দ্রুত প্রসার প্রতিটি বাড়িতে জীবন ধারা বদলে দিয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব বিনোদনের দুনিয়া বদলে দিয়েছে। সময়ের পরিবর্তন ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে মানুষের পছন্দ এবং খাদ্যাভ্যাস। বদলে গেছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন ব্যবস্থা। অনেকের ঘরের খাবারের চেয়ে বেশি পছন্দ হোটেল রেস্তোরাঁর খাবার আর ফাস্টফুড। তাদের জন্য ফুডপান্ডা জাতীয় সরবরাহ প্রতিষ্ঠান অনিবার্য হয়ে উঠেছে। অ্যামাজান ও গুগলের পর ভার্চুয়াল সহকারীকে ডিভাইসের মাধ্যমে এনেছে আলিবাবা। আছে দারাজের মত বহু অনলাইন শপিং অ্যাপস। কোন কিছু চাহিবা মাত্র পাওয়া যাবে। আর এ অনলাইন মার্কেটিংয়ের প্রভাব এতটাই যে বিশ্বের সব খুচরা শপগুলোর শাটার টানতে হচ্ছে।
আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে কৃষিকে। জমি কর্ষণ থেকে ফসল লাগানো, ফলানো, কাটা, বাজারে আনা পর্যন্ত সব কিছু করছে যন্ত্র। ড্রোন এনেছে বিপ্লব। দুর্গম এলাকায় চিকিত্স সেবা দিচ্ছে। জেলেরা সাগরে মাছ ধরছে আধুনিক প্রযুক্তিতে। অনলাইনে আছে গোটা পৃথিবীর আদ্যপান্ত। ইন্টারনেটে গুগলে সন্ধান করলে চাহিবা মাত্র সব পাওয়া যায়। কাগজের বইয়ের জায়গা নিচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বুক (ই-বুক)। কোন কিছু সন্ধানের পরিবর্তে এখন হাতের মুঠোয় গুগল, মজিলার মত অসংখ্য সার্চিং সাইট। যেখানে একটি শব্দ লিখে সার্চ করলে মিনিটে উদ্ভাসিত হয় তথ্য ভান্ডার। পাঠ্যপুস্তক, লাইব্রেরি স্টকে থাকা বস্তা বস্তা বই পড়তে অতটা ধৈর্য্য নেই এ প্রজন্মের অনেকের। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম এখন অনলাইনে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকান্ড, নিবন্ধন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, নোটিশ, চাকরি নিবন্ধন থেকে শুরু করে যেকোন বার্তা অনলাইনের মাধ্যমে সেরে নেওয়া হচ্ছে।
মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় মোবিক্যাশ, বিকাশ, রকেট, মাইক্যাশ, ইউক্যাশ এর মত মানুষদের টাকা-পয়সা নিয়ে ঝুঁকিতে শংকিত থাকতে হয় না। সামান্য মোবাইল নেটওয়ার্ক সিমের একটি নম্বরে প্রযুক্তি মানুষকে বহু টাকার রাখার গোপনীয় ব্যবস্থা দিয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইন মানি ট্রান্সফার এবং এক দেশ থেকে অন্যদেশের টাকা স্থানান্তরের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইন, ই-ব্যাংকিং যেমন ওয়েস্টার্ন মানি ট্রান্সফার, মানি একপ্রেস এর মতো সুবিধা ভোগ করছে এখন মানুষ। রয়েছে নানা অ্যাপ। গাড়ি ডেকে পাঠাতে, খাবার অর্ডার করতে, গান শুনতে, কোনো কিছু কিনতে, এমনকি সঙ্গী খুঁজতে এখন অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন মানুষ। বিনামূল্যের অ্যাপ ব্যবহারের পাশাপাশি পয়সা খরচ করে অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন অনেকে।
গবেষণা সংস্থা ইমার্কিটারের তথ্য অনুযায়ী স্মার্টফোন আসার পর বদলে গেছে অনেক কিছু। মানুষ এখন আগের উপায়ে অনেক কাজ না করে, নতুন বিকল্প উপায় খুঁজে নিতে পছন্দ করেন বেশি। মানুষ এখন আর আগের মতো ফোনে কথা বলতে পছন্দ করেন না। মানুষ এখন সোফায় বসে সরাসরি সম্প্রচার দেখেন কম, স্মার্টফোন চালান বেশি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টিভি বিজ্ঞাপনের আয়কে ছাড়িয়ে গেছে মোবাইল বিজ্ঞাপনের আয়। ভিডিও কনফারেন্স ও নানা ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে সরকারি কাজ দ্রুত ও সহজ হয়ে গেছে। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে মিলছে জরুরি সেবা। প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে গেছে ই-কমার্সের সেবা। কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, টেলিভিশন ডিভাইস বহু প্রযুক্তি জীবনকে অভাবনীয় করে তুলেছে। ১৬২৬৩ নম্বরে ডায়াল করে ২৪ ঘণ্টাই পাওয়া যাচ্ছে চিকিত্সা পরামর্শ। এখন বিতর্ক চলে স্টিভ জবস, বিল গেটস নাকি এলন মাক্স প্রযুক্তি বিশ্বে কার প্রভাব বা অবদান বেশি।
বিশ্বের সর্ববৃহত্ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের মতে, ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগরী। প্রজন্মের চোখ এখন অনলাইনে। ক্যানালিস রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে পাঁচশ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহূত হচ্ছে। ২০১০ সালে বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩০ কোটি। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটি। সবমিলিয়ে এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে বিশ্বে বর্তমানে মোট মানুষের চেয়ে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা বেশি। স্বাভাবিকভাবে স্মার্টফোনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা ও সেবা।
এর পাশাপশি সারাবিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি অকল্পনীয় উন্নয়ন ঘটেছে। এ তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নের হাত ধরে সময়েরে সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের সামরিকায়ন উন্নয়ন ঘটছে প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তি আবিস্কারে যোগ হয়েছে হাইপার সোনিক, সুপার সনিক মিসাইল, যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ ও ডুবো জাহাজ। আরো আছে মহাকাশে স্যাটেলাইট। সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ মারাত্নক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র আনবিক বোমা, পামানবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা। আরো যুক্ত হয়েছে রোবট ট্যাংক ও ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র। এর সর্বশেষ বিশ্ববাসী প্রত্যেক্ষ করল ওয়াকিটকি ও পেজার ডিভাইসে বিস্ফোরক স্থাপনের মাধ্যেমে বিস্ফোরণে প্রযুক্তির ব্যবহার।