অর্থনীতি ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল ব্যাংকিং খাত সংস্কার করা। ফলে বিভিন্ন সময় ব্যাংক খাতের নানা তথ্য নিয়েছে সংস্থাটি। এবার প্রথমবারের মতো ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডসহ সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়েছে ঋণদাতা এ সংস্থা। একই সঙ্গে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানো এবং ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের পরিচালকদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে আইএমএফ সদস্যরা। বুধবার (২৬ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফরকারী আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আছে। এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইন ও বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ও হালনাগাদ তথ্য দেন। বৈঠকে থাকা একাধিক কর্মকর্তা এসব কথা জানিয়েছে।

            বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খেলাপি ঋণের বিষয়ে আইএমএফ খুব সংবেদনশীল। তারা খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তখন তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে নিয়মিত তদারকি করছে। আর সরকারি ব্যাংকগুলোতে বাড়তি নজরদারি রেখেছে। এ সব ব্যাংকের ঋণ কমাতে তাদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়েছে। সেখানে কোন বছর কত টাকা আদায় হবে সেটি উল্লেখ রয়েছে। ব্যাংকের পরিচালকদের ক্ষমতার অপব্যবহার কমাতে আইনের সংস্কার চায় তারা। এছাড়া ব্যাংকের পাশাপাশি বিমা কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হালনাগাদ তথ্য, পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে আইএমএফ।

            এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ স্টাফ ভিজিট একটি নিয়মিত কাজ। সদস্য সব রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির আলোকে সংস্থাটি সংস্কার নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে নিয়মিত তদারকি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আলোচনা করেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে বলে জানানো হয়। আশার বিষয় যে আমাদের নিজস্ব প্রয়োজনে কিছু রিফর্ম (সংস্কার) নিয়ে কাজ করছি। এতে আইএমএফ চাহিদা অনেকাংশে মিটে যাবে বলে আশা করা যায়।

            কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ উচ্চ খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। কারণ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি ঋণের হার সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সহনীয় বলে ধরা হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ হিসাবে গেল বছর (২০২২ সাল) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। আইএমএফ কাছ থেকে ঋণ নেয়ার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ বলেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে এবং বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে।

            বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ খেলাপি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আলোচিত সময় ঋণের পরিমাণ ১১ লাখ ৪৪৮ কোটি টাকা। এ খাতে খেলাপি ঋণ ৫৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা; যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ খেলাপি এবং বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর ৩৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি।

খবরটি 335 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen