পযর্টন ডেস্ক: যান্ত্রিক শহুরে কোলাহলকে পেছনে ফেলে মরোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য পাহাড়ের পর্যটনে নির্মল বাতাসে মন ভরাতে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ ছুটে যান। পাহাড়ের নয়নাভিরাম অপরুপ সৌন্দর্য বিশালতার কাছে নিজেকে সপেঁ দিয়ে মনকে দুদন্ড বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করেন অনেক ভ্রমন পিপাসু পর্যটক। যারা ট্র্যাকিং করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে পছন্দের শীর্ষে থাকে পাহাড়। আর পাহাড় বলতে আমাদের চোখে ভেসে উঠে পার্বত্য চট্টগ্রামের সুবিশাল পাহাড়ে ঘেরা জনপদের কথা। প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক আাসেন মেঘের রাজ্য খ্যাত সাজেক ভ্যালীতে। পাহাড়ের বুকে গড়ে উঠা এ স্বপ্ন নগরী যেনো কল্পনার রাজ্যের কোনো গোছানো স্বপ্নের এক ছোট্ট শহর সাজেক ভ্যালী পর্যটন। এ সাজেক ভ্যালীতে রয়েছে সাজেকের সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া কংলাক পাহাড়। যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট। মরোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় সকাল ও বিকাল বেলার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত মনোমুগ্ধ করে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের।
সাজেকে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সাজেকের সর্বোচ্চ এ পাহাড়ে আরোহনের লোভ খুব কম সংবরণ করতে পারেন। আর লোভ হবে নাই বা কেন। কংলাক পাহাড়ের পাদদেশ থেকে হাঁটা শুরু করে ধীরে যখন পাহাড়ের চূড়ার দিকে যাওয়া হয়, পাহাড়ের লিলুয়া বাতাস এক স্বর্গীয় শান্তির পরশ বুলিয়ে যায় শরীর মন জুড়ে। পাহাড়ে উঠার কষ্টটাকে পুরোপুরি ম্লান করে দিতে চূড়ায় অপেক্ষা করতে থাকে ভোরের সূর্য। কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভোরের সূর্যোদয় আর বিকেলে সূর্যাস্ত দুটো উপভোগের সুযোগ পাওয়া যায়। আর বর্ষা মৌসুমে চূড়ায় দাঁড়িয়ে যতটুকু চোখ যাবে শুধু সাদা মেঘের ভেলায় চোখে পড়বে। মনে হবে, যেনো মেঘের ভেলায় ভেসে যাচ্ছি। কংলাক পাহাড় একাকী দাঁড়িয়ে থাকা কোনো বোবা প্রাকৃতিক কাঠামো নয়। এ পাহাড় ধারণ করে আছে জনজীবন। কারণ কংলাক পাহাড়ের উপরে কংলাক পাড়া অবস্থিত। সাজেক ভ্যালী মূলত কংলাক পাড়া আর রুইলুই পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। কংলাক পাহাড়ের চূড়ার ছোট্ট গ্রামটিতে লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজনের বসবাস। এখানকার বেশিরভাগ পরিবার জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। জুমে উৎপাদিত ধান, ফসল দিয়ে মূলত তারা খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। তবে বিগত কয়েক বছরে সাজেকে পর্যটন শিল্পের বিকাশের কারণে অনেকে এখন পর্যটক নির্ভর কিছু ছোট ব্যবসা শুরু করেছে। কংলাক পাহাড় কমলাক পাহাড় বা কমলাক পাড়া পরিচিত।

            স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, কংলাক পাহাড়ের পাশে বড় কয়েকটি কমলা বাগান থাকাতে এটিকে কমলাক পাড়া বলা হয়। এখানে কমলার পাশাপাশি আদা ও হলুদের চাষ করা হয়। কংলাক পাহাড়ের নিচে কংলাক ঝর্ণা নামে একটি ঝর্ণা রয়েছে। মূলত এ ঝর্ণার নামানুসারে এ পাহাড়ের নাম কংলাক পাহাড় হয়েছে। কংলাক পাহাড়ে ছোট কয়েকটি দোকান, গীর্জা রয়েছে। সাজেকের পর্যটন শিল্পের বিকাশের সঙ্গে কংলাক পাহাড় ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে।
কংলাক পাহাড় থেকে লুসাই পাহাড় স্পষ্ট দেখা যায়। যে লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়েছে কর্ণফুলী নদীর। চারদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি, কংলাক পাহাড়কে সাজেকের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত করেছে। সাজেকে ভ্রমণরত পর্যটকদের কাছে এটি এখন বেশ জনপ্রিয়। রুইলুই পাড়া হতে কংলাক পাহাড়ের দূরত্ব ২ কিলোমিটার। গাড়ি নিয়ে কংলাক পাহাড়ের নিচ পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখানে থেকে হেঁটে কংলাক পাহাড়ে উঠতে হয়। সাজেক হ্যালিপ্যাড থেকে এ পাহাড়ের দূরত্ব ৩০-৪০ মিনিটের হাঁটা পথ। তাই যারা ট্র্যাকিং পছন্দ করেন, তারা হেঁটে যাওয়াকে বেছে নেন।
কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে কথা হলো কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে। তারা জানালেন তাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। পটুয়াখালী সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসমিয়া জান্নাত বলেন, আমরা ২০১৮ সালে আরো একবার এখানে এসেছিলাম। কংলাক পাহাড় সৌন্দর্য আমাদের এতটা বিমোহিত ও মুগ্ধ করেছে যে আবারও আসতে বাধ্য হলাম। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে উঠতে একটু কষ্ট হয়। কিন্তু চূড়ায় উঠার পর যে দৃশ্যটা দেখতে পাই, তার জন্য এ কষ্টটা সহ্য করা যায়।

            আরেক পর্যটক আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, কংলাকের চূড়ায় সকাল ও বিকাল বেলার যে নির্মল আবহাওয়া পাওয়া যায়। এটা মূলত খুব বেশি ভালো লেগেছে। উপরে দাঁড়িয়ে নিচের ছোট পাহাড় আর মেঘ-কুয়াশার মিশেল এক অনবদ্য পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। এখানে আসলেই এটা অনুভব করা যাবে।

খবরটি 461 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen