জাতীয় ডেস্ক: দেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এখন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে কাদের জুটবে নৌকার টিকিট তা নিয়ে দলটি মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়েছে। দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে দলের হাইকমান্ড যোগ্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমান ও অতীতের সংসদ সদস্যদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। এবার বয়স্ক, পারিবারিক কলহ, সাংগঠনিক দুর্বল, জনবিচ্ছিন্ন ও নানা কারণে বিতর্কিত এমপিদের নৌকার টিকিট না দেওয়ার বিষয়ে অনড় দলের হাইকমান্ড। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে যারা বাতিলের তালিকায় আছেন তাদের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রকাশ্যে কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।

            দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচন কেন্দ্রিক কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। তৃণমূলের সব পর্যায়ে ভোটের আমেজ তৈরি করতে কাজ করছে সংগঠনটি। নিজ দলের নেতাদের সক্রিয় করতে সাংগঠনিক দায়িত্ব প্রাপ্তরা মাঠে অবস্থান করছেন। নিজ কর্মসূচির পাশাপাশি বিরোধী দলের কর্মসূচি ফলো করছেন ক্ষমতাসীনরা। কর্মসূচির পাশাপাশি মাঠে মিছিল, মিটিং কিংবা জনসভা ছাড়া ভেতরে দলকে গুছিয়ে নিচ্ছেন হাইকমান্ড। আগামী নির্বাচনে কারা দলীয় প্রার্থী হবেন তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের আমলনামা নিয়ে কাজ করছে দলটি। সরকারের বিশেষ সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এমপিদের সার্বিক কর্মকাণ্ড। আগামী নির্বাচনে যাদের ওপর আস্থা রাখা যায় তাদের তালিকা আলাদাভাবে তৈরি করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করছে দলটি। এখানে শেষ নয়, বিতর্কের কারণে যারা বাদ পড়তে পারেন তাদের আসনে বিকল্প প্রার্থী খুঁজে দেখা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দুভাবে তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। প্রথমে এমপিদের ওপর জরিপ চালানো হচ্ছে। যে সব এমপি বিতর্কিত, তাদের স্থলে কাদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে; সে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে এক আসনে কয়েক জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। প্রায় অর্ধশতাধিক এমপির ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কিত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে এক এমপির ছেলের অপকর্ম এবং আরেক এমপির বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে কাদের সন্তানরা অবস্থান করছেন, কোন দেশের অবস্থান করছেন, সে সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমাদের নেত্রী প্রতিটি সংসদীয় আসনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কে কী করছেন, কারা দলের জন্য কাজ করেন, কারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করেন, কোন সংসদ সদস্য এলাকায় যান, কারা যান না সব বিষয়ে খোঁজ রাখছেন দলের হাইকমান্ড। আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের ভালো প্রস্তুতি আছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের পর আমরা নির্বাচনের জন্য মাঠে নেমে গেছি। তৃণমূল পর্যায়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে আমরা বিগত সময়ের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।

            আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য আমাদের ভালো প্রস্তুতি আছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলনের পর আমরা নির্বাচনের জন্য মাঠে নেমে গেছি। তৃণমূল পর্যায়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে আমরা বিগত সময়ের মতো বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, এলাকায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা ভালো, তাদের ওপর আমরা নির্ভর করব। দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরে দলের হাইকমান্ড যোগ্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বর্তমান ও অতীতের সংসদ সদস্যদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এবার বয়স্ক, পারিবারিক কলহ, সাংগঠনিক দুর্বল, জনবিচ্ছিন্ন ও নানা কারণে বিতর্কিত এমপিদের নৌকার টিকিট না দেওয়ার বিষয়ে অনড় দলের হাইকমান্ড। যাদের জনপ্রিয়তা আছে, এলাকায় যাদের গ্রহণযোগ্যতা ভালো, তাদের ওপর আমরা নির্ভর করব। তিনি আরও বলেন, প্রতি ছয় মাস পরপর সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে তদন্ত করা হয়। সে রিপোর্ট দলের হাইকমান্ডের কাছে রয়েছে। অতীতের কর্মযজ্ঞ আর জনসম্পৃক্ততা আগামীর নৌকার টিকিট। আর যারা মাঠে যাননি, ভোটারদের খোঁজখবর নেননি, তারা এবার ছিটকে পড়বেন। নেত্রী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আসনগুলোর প্রকৃত চিত্র সংগ্রহ করছেন।

            জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলছে। নির্বাচন কমিশনের আভাস অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচন এলে দেশের রাজনীতিতে নানা ধরনের গুজবের ডালপালা বিস্তার করে। আমরা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে অভিযাত্রা শুরু করেছি। আমাদের দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করব। আগামী নির্বাচনে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাই। ফাঁকা মাঠে আমরা গোল দেব না। আমাদের নেত্রী প্রতিটি সংসদীয় আসনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কে কী করছেন, কারা দলের জন্য কাজ করেন, কারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করেন, কোন সংসদ সদস্য এলাকায় যান, কারা যান না সব বিষয়ে খোঁজ রাখছেন দলের হাইকমান্ডনাম।

            গত ১৩ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদ সদস্যদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জনগণ যাদের চায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন, কিংবা অনেক ক্ষমতাধর মনে করা কেউ মনোনয়ন পাবেন না তা পরিষ্কার করে বলছি আমি। তার কাছে জরিপ রিপোর্ট রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করেছেন, যারা জনগণের কাছে যান, আওয়ামী লীগের উন্নয়নের কথা বলেন, ভোট চান, জনগণের সুযোগ সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাদের চায় তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

খবরটি 335 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen