জবভ:                               উধঃব: ২৬ মার্চ ২০২৩

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সফলভাবে সম্পন্ন

শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান

অঙ্কন চাকমা সভাপতি ও অমল ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত

গত ২৪-২৫ মার্চ ২০২৩ খাগড়াছড়িতে দুই দিনব্যাপী পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৬ তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীর পরিচালিত নিষ্ঠুর দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

            খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এড়িয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপিডিএফ, ডিওয়াইএফ, শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতৃবৃন্দ। কাউন্সিল উপলক্ষে পিসিপি’র একটি অগ্রবর্তী টিম সপ্তাহখানেক পূর্বে নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেয় এবং মঞ্চ, হলরুম, খাদ্য-আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করে।

            কাউন্সিল উপলক্ষে স্থাপিত ব্যানারের ক্যাপশনে ছিল তিনটি প্রধান শ্লোগান “পার্বত্য চট্টগ্রামে বন পরিবেশ ধ্বংস, খনিজ সম্পদ লুন্ঠনের পায়ঁতারা ও ইসলামিকরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোল! শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নৈরাজ্য-গোয়েন্দা নজরদারি-সেনা খবরদারি চলবে না! নির্বিচারে ধরপাকড়, নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, খুন-গুম ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা-হুলিয়া অব্যাহত ভূমি বেদখল ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ এক হও, রুখে দাঁড়াও”।

            পিসিপি’র আপোষহীন সংগ্রামকে বিকশিত ও গতিশীল করতে হলে নতুন নেতৃত্বকেও গতিশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করে অংগ্য মারমা বলেন, বিগত সময়ে পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত আপোষহীন সংগ্রামের কারণে সরকার ২০১৭ সালে স্ব স্ব মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে বাধ্য হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে ছাত্র যুব সমাজকে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

            পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুনীল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, ইউনাইটেড ওয়ার্কাস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দপ্তর সম্পাদক সাবিনা চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

            পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউপিডিএফ সংগঠক বিপুল চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা এবং উত্থান সহজ ছিল না। শাসকগোষ্ঠী ও জাতির দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ তার নীতি আদর্শ সমুন্নত রেখেছে। ১৯৯৭ সালে ‘পার্বত্য চুক্তির’ সন্নিকটে পিসিপি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিপরীতে ছাত্র সমাজের মধ্যে সুবিধাবাদী ও আপোষকামী অংশটি স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করে আপোষ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নেয় এবং পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে পাহাড়ি ছাত্র সমাজকে বিভ্রান্ত, দ্বিধা-বিভক্ত করা হয়েছিল। ফলে ছাত্র সমাজ নানা বিভ্রান্তিতে পড়ে। কিন্তু পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত পিসিপি আবার সাংগঠনিক অবস্থান সুদৃঢ় করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজকে আরো নতুন দিশা দিতে সক্ষম হয়। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বর্তমান নেতৃত্বে নানা দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নতুন নেতৃত্বকে সে সকল দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে তুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমন-পীড়ন, নির্যাতন, অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে । পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ জাতীয় আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মন্তব্য করে বিপুল চাকমা বলেন, পিসিপি’র শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে আন্দোলন করছে তা নয়, দেশে ক্রিয়াশীল অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাথে যৌথভাবে জাতীয় বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকা পালন করছে । পাহাড়ের গণ্ডি পেরিয়ে পিসিপি জাতীয় পর্যায়ে ভাবমূর্তি ও সুনাম অর্জন করেছে। আগামীতেও পিসিপির নেতা-কর্মীকে যোগ্য ও দক্ষ হয়ে জাতীয় গুরু দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে।

            কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ একটি গতিশীল সংগঠন। এই সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নব গতিতে ছাত্র সমাজকে আপোষহীন সংগ্রামের ধারায় যুক্ত করবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে লড়াইয়ের ইতিহাসে পিসিপি একটি ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডকে করায়ত্ত্ব করতে পিসিপি’র নাম ভাঙিয়ে অনেক ভুঁইফোড় সংগঠন বিতর্কিত কার্যক্রম চালাচ্ছে। পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে আন্দোলনরত পিসিপি’র সাথে এদের পার্থক্য ত্যাগ আর সংগ্রামের। পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সংকটে এসব সংগঠনকে চেনা গেছে।  তিনি বলেন, পূর্ণস্বায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে পিসিপি লড়াই সংগ্রাম করছে এ সংগ্রামে পিসিপি বিজয়ী হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের বিজয় হবে, আর পরাজিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পরাজিত হবে। তাই এই আপোষহীন মুলধারা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যুক্ত হওয়া সংগ্রামের ও গৌরবের। আজকের ছাত্র সমাজকে আপোষহীন সংগ্রামের ধারা পিসিপি’তে যুক্ত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইকে এগিয়ে নিতে হবে।

            হিল উইমেন্স ফেডারেশন সভাপতি নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়কের নামে বন-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্ববংস করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বছর ৮টির অধিক ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনা ঘটেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যৌন সন্ত্রাস চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই যৌন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ছাত্র, যুবক ও নারী সমাজকে সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে।

            কাউন্সিলে প্রমোদ জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনা ছাউনী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। যাহাতে এ অঞ্চলে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার অর্জন করেত না পারে। তিনি বলেন, পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে অর্জিত হয়েছে। পাহাড়ি জনগণকেও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জাতির অধিকার অর্জন করতে হবে।

            পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের দপ্তর সম্পাদক সাবিনা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে নেশা ও মাদকদ্রব্য সেবন বেড়েছে। ফলে ব্যাপক সামাজিক অবক্ষয় চলছে। এর থেকে উত্তরণে ছাত্র যুবক নারীকে একযোগে সর্বত্র কাজ করতে হবে।

            স্বাগত বক্তব্য অমল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ একটি গৌরবজ্জ্বোল নাম। লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে শত শহীদের রক্তের মধ্যে পিসিপি ৩৩ বছর পূর্ণ করেছে। আমরা ৮৯’এর উত্তরসূরী। রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন ও অন্যায়ের কাছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ মাথা নত করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ লড়াই সংগ্রাম জারি রাখবে।

            ২৪ মার্চ সকালে নির্ধারিত ভেন্যুতে পিসিপি’র সভাপতি সুনয়ন চাকমা কর্তৃক দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দু’দিনের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল শুরু হয়। এতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য রুপসী চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ও সারা বিশ্বে নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুনয়ন চাকমা দীর্ঘ ১৯ মাস কারান্তরীন থাকার পর সদ্য কারামুক্ত পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রূপায়ন চাকমাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

            প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক রিপোর্ট, সাংগঠনিক সম্পাদকের সাংগঠনিকে রিপোর্ট, অর্থ সম্পাদকের অর্থ রিপোর্ট ও দপ্তর সম্পাদকের দাপ্তরিক রিপোর্ট পেশ করলে এর উপরে উপস্থিতি পিসিপির বিভিন্ন শাখা থেকে প্রতিনিধিরা আলোচনা, পর্যালোচনা, সমালোচনা, মতামত, প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

            দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সকল শাখার প্রতিনিধিরা স্বস্ব এলাকার পরিস্থিতি, সাংগঠনি অবস্থান ও করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরেন ও আলোচনা করেন। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনের কেন্দ্রীয় সকল নেতৃবন্দ স্বস্ব সাংগঠনিক অবস্থান, দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা ও সফলতা তুলে ধরেন। কাউন্সিল অধিবেশনে দ্বিতীয় দিনের তৃতীয় অধিবেশনে কমিটির সকল সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিনিধিদের মাঝে ব্যাখা প্রদান এবং নতুন কমিটি প্রস্তবনা তুলে ধরেন পিসিপি সভাপতি সুনয়ন চাকমা। নতুন প্রস্তাবিত কমিটির ওপরে প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনা পর্যালোচনা শেষে তুমুল করতালির মাধ্যমে কমিটি অনুমোদন করেন। এতে সর্বসম্মতিক্রমে অঙ্কন চাকমা সভাপতি, অমল ত্রিপুরা সাধারণ সম্পাদক ও শুভাশীষ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়। কাউন্সিল দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে পিসিপি নব গঠিত সভাপতি অঙ্কন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বিদায়ী কমিটির সভাপতি সুনয়ন চাকমা, নিউটন চাকমা, নীতি চাকমা, রিতা চাকমা ও এন্টি চাকমা নতুন কমিটি ও পিসিপি’র  নেতা-কর্মীদের ওপর প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা, পরামর্শ প্রদান করেন।

বার্তা প্রেরক

থুইলাপ্রু মারমা

দপ্তর সম্পাদক

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ

কেন্দ্রীয় কমিটি।

খবরটি 387 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen