স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সীমান্ত এলাকায় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সেনা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে ১০ জন সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। এ অভিযানে আটক নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ৭ জন ও বমপার্টি নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ৩ সদস্য রয়েছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুর ১২:০০ টায় মেঘলায় বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে র‌্যারের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের সহকারী পরিচালক লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং লে: কর্নেল খন্দকার আল মঈন। অভিযানে আটক জঙ্গি সদস্য (১। সৈয়দ মারুফ আহাম্মদ প্রকাশ মানিক (৩১), পিতা-সৈয়দ আবুল কালাম, থানা-জগন্নাথপুর, জেলা-সুনামগঞ্জ। ২। ইমরান হোসাইন শাওন (৩১), পিতা-মোঃ শাহআলম, থানা-স্বরূপকাঠি, জেলা-ফিরোজপুর। ৩। কাওসার শিশির (৪৬), পিতা-গোলাম কিবরিয়া, থানা-শৈলকুপা, জেলা-ঝিনাইদহ। ৪। জাহাঙ্গীর আহাম্মদ জনু (২৭), পিতা-ফজলুল হক, থানা-বিয়ানিবাজার, জেলা-সিলেট। ৫। মোঃ ইব্রাহীম আলী (১৯), পিতা-নয়ন মৃধা নুরুজ্জামান, থানা-মুলাদি, জেলা-বরিশাল। ৬। আবু বক্কর ছিদ্দিক বাপ্পি (২৩), পিতা-আতিকুল আলম, থানা-গোলাপগঞ্জ, জেলা-সিলেট। ৭। রুফু মিয়া (২৬) পিতা-আব্দস সালাম, থানা-চাতক, জেলা-সুনামগঞ্জ। আটক জঙ্গী আশ্রয় দাতা কেএনএফ সদস্য ১। জৌথান স্যাং বম (১৯), পিতা-লাল মুন সয় বম, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান, ২। ষ্টিফেন বম (১৯), পিতা-লাল মিন সম বম, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান ও ৩। মাল সম বম (২০), পিতা-জিক বিল বম, রোয়াংছড়ি, বান্দরবান। এ সময় এসবিবিএল বন্দুক ৯টি, গুলি ৫০ রাউন্ড, কার্তুজ কেইস ৬২টি, লম্বা বন্দুক ৬টি, কার্তুজ কেইস ১টি, কার্তুজ বেল্ট ২টি, বিদেশী পিস্তল ১টি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি, পোষাক ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের সহকারী পরিচালক লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং লে: কর্নেল খন্দকার আল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। র‌্যাব উক্ত বিষয়ে নজরদারী বৃদ্ধি করে। র‌্যাব জানতে পারে আরো বেশ কিছু তরুণ ঘর ছেড়ে উগ্রবাদের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। র‌্যাব বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ৪ তরুণকে আটক করে। পরে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে র‌্যাব। গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিখোঁজ ৪ তরুণ ও উগ্রবাদী সংগঠনের দাওয়াতী, তত্ত্বাবধান, প্রশিক্ষণ, আশ্রয় প্রদান ও অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ৩ জনসহ মোট ৭ জনকে আটক করে র‌্যাব। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ি ও কেরানীগঞ্জ হতে উগ্রবাদী সংগঠনটির দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও নিরুদ্দেশ ৩ জনসহ মোট ৫ জনকে আটক করে র‌্যাব। তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া দেশের ১৯ জেলার ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করে র‌্যাব। তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। তিনি আরো বলেন, হুজিবি, জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম নিষিদ্ধ হওয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে সদস্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছিল। হরকতুল জিহাদ (জেএমবি) ও আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। এ সংগঠনটি ২০১৯ সালে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামে নামকরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি আরো বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে ইসলামী জঙ্গী দলে যোগ দিয়ে বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, বিভিন্ন নাশকতা ও সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনা ও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। নতুন এ ইসলামী জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। এ তথ্যের ভিত্তিতে গত ৯ অক্টোবর থেকে রাত থেকে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজাম পাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ৭ জন ও কেএনএফ ৩ সদস্যসহ ১০ জন সন্ত্রাসী আটক করতে সক্ষম হয়েছি। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম। ইসলামী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার উপদেষ্টা শামীম মাহফুজের সঙ্গে বমপার্টি কেএনএফ প্রধান নাথান বমের একটি চুক্তি হয়। এ বিষয়টি গ্রেপ্তারকৃত বমপার্টি কেএনএফ তিন সদস্য জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন এ বিষয়ে তিনি জানন। দুই সন্ত্রাসী সংগঠনের ২০২১ সালের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইসলামী জঙ্গি সদস্যদের কেএনএফ গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। বিনিময়ে ইসলামী জঙ্গিরা বমপার্টিকে মাসিক তিন লাখ টাকা ও কেএনএফ সদস্যদের সমস্ত খরচ বহন করবে।

            গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার রাইক্ষ্যং, বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া, শিপ্পি পাহাড়, রনিন পাড়া ও কেউক্রাডং পাহাড়ের আশেপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সন্ত্রাস বিরোধী চিরুনি অভিযান চলছে। সমতল এলাকার একটি ইসলামী জঙ্গি সংগঠনকে পাহাড়ি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী এ অভিযান শুরু করে। অভিযানে সেনাবাহিনীর সহস্রাধিক সেনা ও র‌্যাবের সদস্যরা অংশ নেয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো ব্যবহার করা হয়। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ অভিযানে প্যারা মিলিটারি সদস্যরা অংশগ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি পাহাড়ে সন্ত্রাস বিরোধী বড় অভিযান মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খবরটি 438 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen