পযর্টন ডেস্ক: হাওর খ্যাত নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার পনারপারুয়া গ্রাম। ভ্রমণের গন্তব্য সীমান্তবর্তী অঞ্চল পাঁচগাও এলাকায় চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়। দু’পাশে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। ধানক্ষেত, মাছের খামার, এসব পেরিয়ে দৃষ্টি চলে যায় দূরের সাদা মেঘের নীল আকাশ। দেখতে অনেকটা ছবির আঁকা গ্রামের ল্যান্ডস্কেপের মতো দৃশ্য। পাঁচগাও বাজারের যেখানে এসে পিচের রাস্তা শেষ হয়ে গেছে। সেখান থেকে বামে মোড় দিয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে যেতে হবে চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়। বিজিবি ক্যাম্পকে ডানে রেখে একটু এগিয়ে ব্রিজের আগের রাস্তা দিয়ে বাইক নিয়ে যাওয়া যায়। পাহাড়ের পাদদেশে মনোরম পরিবেশে আদিবাসী ম্রো নৃগোষ্ঠী লোকের বসবাস। এখানে সুবিমল ম্রো নামে একজন ম্রো ভাই মোটরবাইক পার্কিং এর ব্যবস্থা করে রেখেছে। প্রতি বাইক বিশ টাকা। ওখানে সামনে বাংলাদেশ বর্ডারের ভিতর বিএসএফ জওয়ান টহল দেয়। পার্কিং এর পাশে আদিবাসীর ছোট্ট একটা টং দোকান।
বাংলা সাহিত্যের বলা হয়ে থাকে প্রথম প্রতিবাদী চরিত্র হচ্ছে চাঁদ সওদাগর। চাঁদ সওদাগর ছিলেন শিবের ভক্ত। এদিকে মনসা দেবী চেয়েছিলেন চাঁদ সওদাগর তাকে পূজা করুক। কিন্তু চাঁদ সওদাগর মনসাকে পূজা করতে অস্বীকার করেন। ফলে মনসার রোষানলে একে একে হারায় তার সপ্তডিঙ্গা ও পুত্রদের। এরপরেও চাঁদ সওদাগর নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। শেষে পুত্র লখিন্দরের লোহার বাসরে ছিদ্র খুঁজে পায় মনসার পাঠানো সাপ। এ কাহিনী তো প্রায় সকলের জানা। কীভাবে লখিন্দরের নবপরিণীতা বধূ বেহুলা ইন্দ্রের আসরে নেচে গেয়ে দেবতাদের তুষ্ট করে লখিন্দরের জীবন পুনরায় ফিরিয়ে আনে। কেন ধান ভানতে শিবের গীত তা পাঠক একটু সামনে আগালে বুঝতে পারবেন।
চন্দ্রডিঙ্গার নীচে রয়েছে প্রাচীন বটগাছ। চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়ের আকৃতি অনেকটা নৌকার মতো। বৈঠা সদৃশ বিরাট একটা পাথরের চাঁই আছে। এ পাহাড়ের নাম চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়। এবার ফিরে যেতে হয় ভ্রমণ কাহিনীর শুরুর দিকে। সে বিখ্যাত প্রতিবাদী চরিত্র চাঁদ সদাগরের ডিঙ্গার নামে এ পাহাড়ের নাম চন্দ্রডিঙ্গা। পাহাড়ের সামনে একটা প্রাচীন বটবৃক্ষ। চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়ের যে অংশটুকু ভারতের মধ্যে সেখানে একটা ঝর্ণা আছে। ভ্রমণ পিপাসুরা ট্র্যাকিং করে সৈন্দর্য উপভোগের জন্য সে ঝর্ণা পর্যন্ত চলে যায়। সুশীতল পানি। টান্ডা’ ঝর্ণা জলে গা ভেজানো যায়। ভেজা গায়ে তীব্র রোদে পুড়তে ফিরে নারপারুয়া গ্রাম। স্মৃতির উজানে রেখে চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়ে ভ্রমণের স্মৃতির ও আনন্দের কথকতা।