স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে বার্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) রাত ৭টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট অডিটরিয়াম হল রুমে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক চিত্রনাট্য রাধামন ধনপুদি প্রদর্শন করা হয়। এর পর চলে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বার্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুস্ঠান আয়োজন করে খাগড়াছড়ি জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট। আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিকিল কুমার চাকমা। প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের নিয়ে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন করেন।

            বার্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় অসুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার জেলা প্রসাশক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রসাশক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঞা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও আহবায়ক (সংস্কৃতি বিভাগ) সিংইয়ং ম্রো, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও আহবায়ক (সংস্কৃতি, সমবায় ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ) নিলোৎপল খীসা।

            রাধামন ধনপুদি আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক চিত্রনাট্য যা প্রেম বা ভালবাসার গল্প। চাকমা সমাজে এ বিক্ষেত প্রেম কাহিনী নিয়ে এক সময় চিত্রনাট্য রচিত হয়। রাধামন চাকমা ও ধনপুদি চাকমা তারা উভয়ে চাকমা জনগোষ্ঠীর বংশধর মনে করা হয়। অপরদিকে বর্তমান তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী রাধামন ও ধনপুদি আদিবাসী তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর মনে করে। রাধামন ধনপুদি প্রেম হাহিনী নিয়ে ইতিহাস ও অতীতকে ফিরে দেখা প্রয়োজন। অতীতের সে সময় চাকমা রাজা ছিলেন বিজয় গিরি চাকমা। বিজয় গিরি রাজার সেনাপতি ছিলেন রাধামন দৈনাক চাকমা। তখন সময়ে চাকমা জনগোষ্ঠী কর্ণফুলী নদীর অববাহিকা সূত্র ধরে দুই মেরুতে অবস্থানের কারনে আনাক চাকমা ও দৈনাক চাকমা দুই জনগোষ্ঠী নাম ধারন করে। অনেক ঐতিহাসিকগণ ধারণা করেন এ শব্দ দুইটি আদি রুপ আনক ও দৈনক ছিল। এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর অববাহিকা উত্তর মেরু বা উত্তর দিকে বসবাস করা চাকমা জনগোষ্ঠীকে আনাক চাকমা ও কর্ণফুলি নদীর অববাহিকা দক্ষিণে মেরু বা দক্ষিণে বসবাস করা চাকমা জনগোষ্ঠীকে দৈনাক চাকমা বলা হত। পরবর্তীতে আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর আনাক চাকমা শব্দটি পরিবর্তন হয়ে আনাক্য চাকমা ও দৈনাক চাকমা শব্দটি পরিবর্তন হয়ে দৈনাক্য চাকমা হয়। তার পরবর্তী সময়ে আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর আনাক্য চাকমা ও দৈনাক্য চাকমা পরিচয়ের বিষয়টা পরিবর্তন হয়ে শুধু চাকমা ধারণ করে। মনে করা হয় তখন থেকে আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর পরিচয়ের ক্ষেত্রে চাকমা ব্যবহার করা হয়।

            সাম্প্রতিক সময়ে কর্ণফুলি নদীর অববাহিকা দক্ষিণ দিকে অবস্থান বা বসবাস করে আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর ভাষা, পোশাক, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠীগত বিশেষ তফাৎ বা অমিল তাদেরকে দৈনাক্য চাকমা বলা হত। যা বর্তমানে আদিবাসী তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বলা হয়। আদিবাসী চাকমা জনগোষ্ঠীর একটি অংশ তফাৎ বা আলাদা সংস্কৃতি প্রমাণ বা দাবি করে আশির দশকে আদিবাসী তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী আতœপ্রকাশ করে। তার পরবর্তীতে ১৯৮৯ খ্রি: স্থানীয় সরকা পরিষদ ও পরবর্তীতে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে স্বীকৃতি অর্জন করে আদিবাসী তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী। বর্তমানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা অর্জন করে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী।

খবরটি 509 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen