পর্যটন ডেস্ক: সরকার গত ১৯ আগস্ট লকডাউন তথা বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর থেকে দেশের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলে ঠাঁই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। একইভাবে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ঘোরাফেরা বেড়েছে। আবার অনেকে শরতে জলের গান শুনতে সিলেট অঞ্চলের হাওরমুখী হতে শুরু করেছেন। প্রধান ও জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় সেসব এলাকার হোটেল-মোটেল–রেস্তোরাঁ ও পরিবহন মিলিয়ে সব ব্যবসায়ই যেন এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে করোনার কারণে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ না থাকায় পর্যটক তথা ভ্রমণপিপাসুরা দেশের ভেতরেই ঘুরতে যাচ্ছেন। তাঁদের আকৃষ্ট করতে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে হোটেলে-মোটেল ও রিসোর্টগুলো নানা ধরনের মূল্যছাড়ের অফার। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বসে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলেন। সবকিছু খুলে দেওয়ায় তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিংবা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

            বিনোদন পার্কে সমাগম বৃদ্ধি: দেশে প্রায় তিন শ বিনোদন পার্ক আছে। গত ১৯ আগস্ট থেকে এসব পার্কও খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব বিনোদন পার্কে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে। তবে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তেমন ভিড় দেখা যায় না।

            ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সূত্রে জানা গেছে, করোনার আগে প্রতিবছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণ করেন। কিন্তু এবারে করোনার কারণে সাড়ে চার মাস পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় পর্যটন ব্যবসা থমকে যায়। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে সব খুলে দেওয়ায় আবার জমতে শুরু করেছে এই খাতের ব্যবসা।

জানতে চাইলে টোয়াব সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বসে থেকে হাঁপিয়ে উঠছিলেন। সবকিছু খুলে দেওয়ায় তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কিংবা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের বুকিং দেখলেই তা বোঝা যায়। ছুটির দিনগুলোতে কক্সবাজারে ব্যাপক ভিড় হয়।

            সভাপতি, টোয়াব মো. রাফেউজ্জামান জানান, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ এখনো ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে তেমন একটা হয় না। বছরে পাঁচ থেকে সাত লাখ পর্যটক ট্যুর অপারেটরদের আয়োজনে ভ্রমণ করেন। গত দুই সপ্তাহে ধীরে ধীরে ট্যুর অপারেটররাও গ্রাহক পেতে শুরু করেছে। ইদানীং দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণের আয়োজন করতে অনেকগুলো ফেসবুক গ্রুপও তৈরি হয়েছে। এসব গ্রুপের ব্যবসাও চাঙা হচ্ছে। বিশেষ করে সারা দিন ভ্রমণের জন্য ফেসবুক গ্রুপগুলোকে বেছে নেন অনেকে। এসব ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে হাওর ট্যুর বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, প্রিটি ফ্লাইয়ার্স ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ যাত্রা শুরু করে আগস্ট মাসে। গত ২৭ আগস্ট প্রথমবারের মতো ২৫ জনের একটি দল নিয়ে কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরে ভ্রমণের আয়োজন করে তারা। এরপর প্রতি সপ্তাহে এই গ্রুপটি ভ্রমণে ইচ্ছুক গ্রাহক পাচ্ছে।

            প্রিটি ফ্লাইয়ার্স ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের অন্যতম কর্ণধার আসমা মিতা জানান, সবকিছু খুলে দেওয়ার পর নতুন গ্রুপ হিসেবে ভালো সাড়া মিলছে। চলতি মাসজুড়ে হাওর ভ্রমণ চলবে। আগামী মাস থেকে পাহাড়ে ভ্রমণ শুরু হবে। এদিকে সড়ক ও রেলপথের পাশাপাশি আকাশ পথে আসা–যাওয়ায়ও পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে। এ জন্য ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার যাত্রীদের জন্য প্যাকেজ ছেড়েছে। তারা কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রামে দৈনিক একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এসব ফ্লাইটে সিট খালি থাকে না বলে জানা গেছে।

            বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এট্রাকশন (বিএএপিএ) সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দুই সপ্তাহে ধারণক্ষমতার ২০ শতাংশের মতো দর্শনার্থী পেয়েছে বিনোদন পার্কগুলো। বিএএপিএর সমন্বয়ক ও কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সরকার বলেন, ‘খোলার প্রথম দুই সপ্তাহে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদন পার্কগুলো চালানোর অভিজ্ঞতা হলো। দেখতে চেয়েছি, আমরা পারব কি না। এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের মূল্যছাড়, প্যাকেজ ঘোষণা করার চিন্তা করছি। এতে দর্শনার্থী বাড়বে বলে আশা করছি।

খবরটি 478 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen