আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর পুরোপুরিভাবে আফগানিস্তান ত্যাগ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এশিয়া মহাদেশের আফগানিস্তান দেশটির গণতন্ত্র, সুশাসন ও অর্থনিীতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে ব্যর্থতায় বিদায় নিতে হয়  পরাশক্তি রাশিয়া। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতায় দেশটির গণতন্ত্র, সুশাসন, অর্থনিীতি উন্নয়ন ও বিশ্বের সন্ত্রাস দমন লক্ষ্যে নিয়ে পরাশক্তি আমেরিকা ও ন্যাটো শক্তি প্রয়োগের ব্যর্থতার প্রমান রেখে বিদায় নিতে হচ্ছে। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতির গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে তালেবান শক্তির অর্ধেক ক্ষয় করতে ব্যর্থতা প্রমানিত হয়েছে। অদম্য সমরশক্তি থাকার পরে এশিয়া মহাদেশে ভিয়েতনাম পর আফগানিস্তান থেকে দ্বিতীয়বার পিছু হটে গেল পরাশক্তি আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী। ইতোমধ্যে রাজধানী কাবুলের উত্তরাঞ্চলের বহুল আলোচিত বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়েছে বিদেশি সেনারা। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সেনাকে দেশে ফেরানোর ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে বিদেশি বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের ডামাডোলে দেশটিতে আরও প্রভাব বেড়েছে তালেবানের। একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে দলটি। এমন বাস্তবতায় সাধারণ আফগানরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, তাহলে লাভ কী হলো্। মার্কিন বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের সময়সীমা ঘোষণার পর যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে তালেবান। নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ শহর, সীমান্ত এলাকার দখল নিতে শুরু করে তারা। গত মে থেকে দেশটির ৫০টি জেলার দখলে নিতে সমর্থ হয়েছে দলটি। তালেবানের উত্থানের বাস্তবতায় কোথাও আবার বিনা প্রতিরোধে পিছু হটেছে সরকারি বাহিনী।

            প্রবীণ আফগান নাগরিক মালেক মীর। নিজ দেশে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র; দুই পরাশক্তির আগ্রাসনের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। বিদেশি বাহিনীর উপস্থিতি কোনও ফল বয়ে আনতে না পারার ঘটনা তাকে মর্মাহত করেছে। মালেক মীরের ভাষায়, তারা তালেবানের ওপর বোমা হামলা চালিয়ে এসেছিল এবং তাদের (তালেবানের) শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। কিন্তু এখন তাদের (মার্কিন বাহিনী) প্রস্থানের সময় তালেবান এতো শক্তিশালী হয়েছে, শিগগির যে কোনও সময় তারা ক্ষমতা দখল করবে। এই প্রবীণ আফগান নাগরিক বলেন, এতো খুন, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, মানুষের ওপর দুর্দশা চাপিয়ে দিয়ে কী লাভ হলো। এর চেয়ে তারা (মার্কিন বাহিনী) এখানে না আসা ভালো ছিল।

            ২০০১ সালের অক্টোবরে এই তালেবানকে উৎখাত করে আফগানিস্তান দখল করে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দাবি ছিল, ৯/১১ হামলার নেপথ্যে থাকা ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদা নেতাদের আশ্রয় দিচ্ছে তালেবান সরকার। কাবুল দখল করে অবশ্য শান্তির নাগাল পায়নি যুক্তরাষ্ট্র। গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে দুই হাজার ৩১২ জন সেনাকে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে এক হাজার ৮৯৭ জন নিহত সংঘাতের কবলে পড়ে নিহত হয়েছে। বাকি ৪১৫ জনের মৃত্যুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তাদের মৃত্যুর সঙ্গে কোন শত্রুতা বা বৈরিতার বিষয় ছিল না। এই ২০ বছরে আহত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা। একই সময়ে হতাহত হয়েছে বহু আফগান নাগরিক। তালেবানের তীব্র প্রতিরোধের মুখে এবং অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য এক পর্যায়ে সেখানে সামরিক উপস্থিতি বাড়ায় ওয়াশিংটন। এতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ থেকে সরে আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ায় মনোনিবেশ করলে ব্যয় কমে আসে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০১০-২০১২ সালে যখন আফগানিস্তানে লক্ষাধিক মার্কিন সেনা মোতায়েন ছিল তখন প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হতো প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে বার্ষিক ব্যয় ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ছিল ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে রয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডিসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যয়। এর ফলে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮২২ বিলিয়ন ডলার। তবে এতে আফগানিস্তানে অভিযানের জন্য পাকিস্তানে ঘাঁটি পরিচালনার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

            ২০১৯ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যুদ্ধের ব্যয় ৯৭৮ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়েছে। কিন্তু এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, দুই হাজার ৩১২ জন সেনাকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জনটা ঠিক কী? এমন প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে সাধারণ আফগানদের কাছ থেকে। সূত্র: রয়টার্স, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।

খবরটি 471 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen