তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক: বিদেশ গামীদের জন্য কোভিড টিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রবাসী কর্মীদের জন্য টিকা নিশ্চিত করছে। কারণ করোনা মহামারি শুধু মানুষের জীবন নয়, বিপদগ্রস্ত করেছে অর্থনীতির চাকা। এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল পরিমাণ রিমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন করে বিদেশে কর্মী যাওয়া থেমে নেই। বিদেশগামী বা প্রবাসী পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিবন্ধন করতে হবে। এই কঠোর লকডাউন কালে বিএমইটির কেন্দ্রীয় অথবা স্থানীয় অফিসে গিয়ে এই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা বাস্তবসম্মত নয়। এই কাজটি বাস্তব রূপরেখায় রূপান্তর করতে অগ্রণী ভূমিকায় চলে এলো বিদেশ যাত্রায় প্রবাসী কর্মীদের পাশে থাকা সাম্প্রতিক সময়ের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন আমিই প্রবাসী অ্যাপ। আমি প্রবাসী অ্যাপ নিরাপদে ঘরে বসে নিশ্চিত করছে বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন। প্রবাসী কর্মীরা সুরক্ষা অ্যাপে লগইন করে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন। গত ১৩ দিনে এ পর্যন্ত আনুমানিক ৭০ হাজারের কাছাকাছি নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, যা এক অনন্য সাফল্য। প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে গড়ে সাত লাখ মানুষ বিদেশে তাদের কর্মসংস্থানে যোগদানের জন্য যায়। সেই হিসাবে প্রায় ১০ শতাংশ প্রবাসী কর্মী মাত্র দুই সপ্তাহে আমি প্রবাসী অ্যাপ দ্বারা বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।

            প্রবাসী কর্মীদের টিকা দেয়ার বিষয়টি জানাতে গত ৫ জুলাই এটুআই একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ (বিএমইটি) ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

            অনুষ্ঠানে টিকা নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষার পাশাপাশি ‘আমি প্রবাসী অ্যাপে’ নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং বিএমইটি মহাপরিচালক শহিদুল আলম জানান, দেশে পাসপোর্টধারী কোটি মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে কারা বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছে, তা বিএমইটির নিবন্ধন ছাড়া নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ‘আমি প্রবাসী অ্যাপ’ মাধ্যমে ঘরে বসে সেটি করা যাবে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ অ্যাপে নিবন্ধন করেছে। এটি বিএমইটির ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সাফল্যমণ্ডিত করেছে। ঘরে বসে যে কেউ এই নিবন্ধন করতে পারবেন। গুগল প্লে-স্টোর থেকে আমি প্রবাসী অ্যাপটি নামানো যাবে। চাইলে অ্যাপে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধন করতে হলে, প্রথমে নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে আমি প্রবাসীতে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী পাসপোর্টটি স্ক্যান করতে হবে। এরপর প্রদত্ত তথ্য পাসপোর্ট ডাটাবেজের ভেরিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সেই মেসেজ এলেই বিএমইটিতে নিবন্ধন করা যাবে। এই মেসেজ আসতে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

            বিএমইটির নিবন্ধন হয়ে গেলেই প্রবাসীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপে গিয়ে টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। বিএমইটি নিবন্ধন করা থাকলে সুরক্ষায় পাসপোর্ট নম্বর দেয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি যাচাই হয়ে যাবে। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন হয়ে গেলে নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে টিকা সেন্টার ও টিকা গ্রহণের তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। এরপর সেই টিকা নিতে কেন্দ্রে যেতে হবে। এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ‘আমি প্রবাসী অ্যাপ’ মাধ্যমে সরাসরি কোভিড ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন সম্ভব নয়। আর পাসপোর্ট ডাটা ব্যাংকে তথ্য যাচাইকরণ সম্পন্নে প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট লিমিট রয়েছে। ফলে অনেকের মেসেজ পেতে দেরি হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংক্রান্ত সেবা আরও সহজ ও ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত ৮ মে এই অ্যাপটি চালু করে। এর উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। বাংলা ট্র্যাক গ্রুপ এই অ্যাপটির কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কাজে যুক্ত হয়েছে। যে প্রক্রিয়ায় ‘আমি প্রবাসী অ্যাপ’ মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘আমি প্রবাসী অ্যাপ’ ডাউনলোড করুন এবং নিজের মোবাইল নম্বর ও ওটিপির মাধ্যমে অ্যাপে নিবন্ধন সম্পন্ন করুন। অ্যাপে গিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন। অপশনে গিয়ে নিবন্ধনের ধাপগুলো অনুসরণ করে বিএমইটি ফর্মটি সম্পন্ন করুন এবং পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠান। পেমেন্ট করে বিএমইটি নম্বরের জন্য আবেদন করুন এবং বিএমইটি নম্বর পেতে অপেক্ষা করুন।

            অনলাইনে পাসপোর্ট যাচাইকরণ: অ্যাপে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী স্ক্যানারের মাধ্যমে পাসপোর্টটি সঠিকভাবে স্ক্যান করে নিতে হবে। পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রদত্ত তথ্য বিএমইটি লিংক ব্যবহারের নিমিত্তে সরাসরি পাসপোর্ট ডাটা ব্যাংক দ্বারা ভেরিফিকেশনের জন্য যাবে।

            বিএমইটি নিবন্ধনের পেমেন্ট গেটওয়ে: যার পাসপোর্ট যাচাইকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার পেমেন্টের নোটিফিকেশন আমি প্রবাসী অ্যাপ ব্যবহারকারীর কাছে চলে যাবে। আমি প্রবাসী প্রথম ইন-অ্যাপ পেমেন্ট গেটওয়ের ব্যবস্থা চালু করেছে।

খবরটি 390 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen