বিশেষ খবর ডেস্ক: পটুয়াখালী জেলার লেবুখালির পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কারিগরি জটিলতা এবং করোনা ভাইরাসের প্রকোপসহ সব প্রতিবন্ধকতা কেটে গেছে। ইতোমধ্যেই পুরো প্রকল্পের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি না হলে চলতি বছরের শেষ দিকে ব্রিজটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সরকার সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্থের পায়রা নদীর উপর লেবুখালিতে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয়। এতদিন পায়রা নদী সড়ক যোগাযোগে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফেরি পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে সেতু নির্মাণের জন্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর সরকার গঠনের পরপরই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০১১ সালে কুয়েত সরকারের সঙ্গে সেতু নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ শেখ হাসিনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়েই মূলত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজের সূচনা হয়।

            প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সেতুটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলেই তৈরি হবে। শক্তিশালী ক্যাবলের মাধ্যমে সেতুর দুই পাশে সংযুক্ত থাকবে। এরফলে নদীর মাঝখানে মাত্র একটি পিলার থাকবে। সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার ও প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। ৮টি স্প্যান ও ২৬টি ভায়াডাক্টের ওপর নির্মিত হবে মূল সেতু। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিংয়াল ব্রিজ অ্যান্ড রোড কনস্ট্রাকশন কোম্পানী ব্রীজটি নির্মাণ করছে। সেতুটি নির্মাণে ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশ সরকার, কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট- এই প্রকল্পে যৌথভাবে পুরো টাকার যোগান দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই পুরো প্রকল্পের ৬০ শতাংশ এবং শুধু মূল সেতুর ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে বলে প্রকৌশলীরা ধারনা করছেন। সেতুর নির্মাণ কাজের পাশাপাশি খরস্রোতা পায়রা নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণের কাজও এগিয়ে চলছে। পটুয়াখালী জেলাটি এখন উন্নয়নের হাব হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এখানেই তৈরি হয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দর। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখানেই তৈরি হচ্ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ইতোমধ্যেই উৎপাদনে এসেছে। দ্বিতীয় ইউনিট অল্প সময়ের মধ্যেই উৎপাদনে আসবে। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যটনের অন্যতম স্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় পর্যটকরা কুয়াকাটায় যেতে ভোগান্তিতে পড়তেন। পায়রা সেতু চালু হলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে সর্বদক্ষিণ উপকূলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। সড়ক পথের যাত্রী ও যানবাহনের চালকদের ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

            পটুয়াখালি জেলার বাসিন্দা জুবায়ের জানান, পায়রা সেতু চালু হলে দেশের সর্বদক্ষিণের বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। যোগাযোগ, অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে। পায়রা সমুদ্রবন্দর হওয়ায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি আরো বেগবান হবে। বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।

            পায়রা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম জানান, শুরু থেকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। কাজ শুরুর পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারিগরি জটিলতা দেখা দেয়। এতে সেতুর কাজ কিছুটা পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে করোনা ভাইরাসের কারণে আবারো কাজে বিঘ্ন ঘটে। করোনার প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার পর এখন আবার কাজে গতি ফিরেছে। ইতোমধ্যেই মূল সেতুর ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপরই যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে।

খবরটি 684 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen