বিনোদন ডেস্ক: সারা দেশে একসময় সিনেমা হল ছিল ১৪০০। কিন্তু বিদেশী সংস্কৃতির জোয়ারে দর্শকদের কাছে সিনেমা হলগুলোর আবেদন দিন দিন ভাটা পড়ে। লোকসানের মুখে পড়েন উদ্যোক্তারা। অনেকেই বন্ধ করে দেন গ্রামবাংলার বিনোদনের অন্যতম প্রাধান প্রাণকেন্দ্র সিনেমা হলগুলো। দেশে বর্তমানে চালু রয়েছে ২০০ সিনেমা হল। তাও আবার বেশির ভাগই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এর পাশাপাশি গত বছরের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাব দেশের অন্য খাতগুলোর মতো চলচ্চিত্র শিল্পগুলোর ওপর পড়ে। চরম দুর্দিনে পড়ে যায় দেশের চলচ্চিত্র শিল্প। এমনি পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্র শিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আনতে আধুনিক মানের নতুন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ বন্ধ প্রেক্ষাগৃহগুলো সংস্কারের জন্য এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে কম সুদে ঋণ বিতরণের জন্য শিগগিরই একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সারা দেশে প্রায় এক হাজার ৪০০টি পেক্ষাগৃহের মধ্যে বর্তমানে চালু রেেছ ২০০ থেকে ৩০০টি। করোনাভাইরাসের প্রভাবে চালু হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চরম দুর্দিনে পড়েছে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প। বেকার হয়ে গেছে এ শিল্পের সাথে জড়িত কয়েক হাজার মানুষ। সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক ঋণনির্ভর উদ্যোক্তারাও পড়েছেন চরম দুরাবস্থায়। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ চরম অবস্থা কাটাতে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্থিক প্রণোদনা চেয়েছিলেন। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এর ফলে সারা দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম সিনেমা হলগুলো সংস্কার করা সম্ভব হবে। আর্থিক সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে যাবে। তবে তিনি বলেন, সিনেমা হলগুলো শুধু নির্মাণ করলেই হবে না, ভালো ভালো সিনেমা উৎপাদন করতে হবে। এ জন্য উদ্যোক্তাদের সিনেমা নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। কারণ করোনার কারণে সিনেমা হলগুলো বন্ধ থাকায় উদ্যোক্তা ছবি নির্মাণের আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। এ পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য উদ্যোক্তাদের আর্থিক সহায়তা করতে হবে। এ জন্য এ বিষয়েও নজর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলচ্চিত্র শিল্পের আর্থিক সঙ্কট কাটাতে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের জন্য প্রস্তাব আসে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রাম বাংলার বিনোদনের অন্যতম প্রধান প্রাণকেন্দ্র সিনেমা হলগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অনেকেই বাস্তবতার নিরিখে সিনেমা হলগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দীর্ঘদিন সিনেমা হলগুলো বন্ধ ছিল। এ কারণে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। বর্তমানে যেগুলো রয়েছে তা ব্যবসা মন্দার কারণে অনেকে তা ভেঙে বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিচ্ছেন। এমনি পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্রের হারানো ঐতিহ্য ফিরে আনতে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক মানের পেক্ষাগৃহ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। উচ্চপর্যায়ের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে তা আলোচনা সাপেক্ষে এক হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল অনুমোদন দেয়া হয়।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। এ নীতিমালা অনুমোদন হলে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন আকারে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

 

 

 

 

খবরটি 777 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen