বিশেষ খবর ডেস্ক: নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। তারই উদাহরণ পায়রা ও রূপপুরের মতো মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো। তবে এবার নতুন করে সম্ভাবনা তৈরি হতে যাচ্ছে বায়ু বিদ্যুতে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে বাগেরহাটের মোংলায় ২ হাজার ২৫ কোটি ব্যয়ে ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন হয়েছে। ইতোমধ্যে চালু রয়েছে কুতুবদিয়া ও ফেনীতে দুই পাইলট প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি কাজ শুরু হবে চাঁদপুরের কচুয়া এবং কক্সবারের ইনানিতেও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেসরকারি খাতে বাগেরহাটে মোংলায় ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্রয়প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৩৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। যৌথভাবে চায়নার একটি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান ও হংকং ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। সুপারিশকৃত দরদাতা চায়নার কনসোর্টিয়াম অব ইনভেশন এনার্জি, এসকিউ ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং হংকংভিত্তিক ইনভিশন অব রিনিওয়াবেল এনার্জি লিমিটেড। ২০ বছরের চুক্তিতে ১০ টাকা ৫৬ পয়সা কিলোওয়াট পার আওয়ার মূল্যে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা যায়, কুতুবদিয়া ও ফেনীতে চালু থাকা পাইলট প্রকল্পগুলোর মধ্যে কুতুবদিয়ায় ১ মেগাওয়াট করে দুটি এবং ফেনীতে ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি কেন্দ্র রয়েছে। তবে এই প্রকল্প দুটি বেশ পুরনো প্রযুক্তির। ফলে এর বাইরে বাগেরহাটের মোংলা, চাঁদপুরের কচুয়া এবং কক্সবাজারের ইনানিতে আরও তিনটি ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে। প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে বলেও জানা গেছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিডিবি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করবে। কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানই কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে।

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে বায়ু বিদ্যুৎ থেকে প্রায় তিন মেগাওয়াট (দুই দশমিক ৯ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এবার বৃহত্তর পরিসরে বায়ু বিদ্যুতের  সম্ভাব্যতা যাচাই করতে চাচ্ছে সরকার।

বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে চীন ও ভারতসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে বায়ু বিদ্যুৎ এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ফলে বাংলাদেশও এবার এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাইছি। একসময় বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা এ ধারণায় পরিবর্তন এনেছি। আশা করছি সব প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে।

গত বছর বায়ু প্রবাহের রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, দেশের কিছু এলাকা বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। বায়ু প্রবাহের ক্ষেত্রে সংস্থাটির বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ৯টি এলাকার বাতাসের গড় গতিবেগ ৫ থেকে ৬ মিটার সেকেন্ড; যা বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য আদর্শ। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশের বায়ুর প্রবাহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযোগী এবং স্বাভাবিকভাবে দেশের উপক‚লীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

খবরটি 700 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen