অর্থনীতি ডেস্ক: দেশে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধনের পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। বহু প্রতীক্ষিত এ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ বাড়ছে জনমনেও। টিকাদান কার্যক্রমের খবরে অর্থনীতিতেও প্রাণর সঞ্চার হয়েছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন অর্থনীতি নিয়ে গভীর চিন্তিত, তখন বাংলাদেশ অধিকাংশ সূচকে ভাল করেছে। সঙ্কটের মধ্যেই স্বস্তি ফিরেছে অর্থনীতিতে।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরে আসায় চলতি বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশা করেছেন অনেকেই। তবে ঘুরে দাঁড়ানো অর্থনীতিতে বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে শঙ্কা থাকলেও ভ্যাকসিন প্রয়োগে সম্ভাবনাই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।

জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। প্রথম দিন ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরের দিন ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে আরও ৫৪১ জনকে এই টিকা দেয়া হয়। দেশে করোনার টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হিসেবে মন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ (ভিআইপি) ব্যক্তিরাও টিকা নিয়েছেন। চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি সাগ্রহে টিকা নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, হাসপাতাল প্রধান। এমনকি টিকা নিতে দ্বিধা করেননি চিকিৎসক দম্পতি, প্রবীণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও। গত দু’দিনে পাঁচ ভিআইপিসহ মোট ৫৬৭ জন অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ‘কভিডশিল্ড’ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত সবাইকে উপহারের টিকা থেকে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে টিকা পাঠানো শুরু হয়েছে। এরপর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে টিকা দেয়া কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, বড় ব্যক্তিরা টিকা নেয়ায় সাধারণ মানুষ টিকা নিতে নতুন করে অনুপ্রেরণা পাবে। মানুষের ভয় ভাঙবে। মানুষের মধ্যে যে একটা ভয় ছিল, সেটা চলে যাবে। আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব ভাল হচ্ছে। সবার মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করবে। মানুষের মধ্যে যে ভীতি কাজ করছিল, সেটা চলে যাবে। সবাই উৎসাহের সঙ্গে টিকা নেবে।

ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, একটা শ্রেণী টিকা নিয়ে অপপ্রচার করছে। আমি টিকা নেয়ার পরে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করিনি। কোন সমস্যা হচ্ছে না। অনেকের ভেতরে যে প্রশ্ন ছিল রাজনীতিবিদরা কেন টিকা নিচ্ছে না, সেই জায়গা থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি টিকা নেব। টিকা নিয়ে অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে ধরনের অপপ্রচার সোশ্যাল মিডিয়ায় ষড়যন্ত্রকারী এবং দেশবিরোধীরা করছে, তাতে কেউ যেন কান না দেয়। সে জন্য আমি মিডিয়ার সামনে টিকা নিয়েছি। টিকা নিরাপদ। সবাই নির্ভয়ে টিকা দিন।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএসএমএমইউ কেন্দ্রে টিকা নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি পুরোপুরি ভাল আছি। তিনি বলেন, ‘যারা নিচ্ছেন তারা বেশ আগ্রহ নিয়েই টিকা নিচ্ছেন। কিন্তু যারা এখনও টিকা নিচ্ছেন না, ইতস্তত করছেন তারা আসলে অমূলক বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’ সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশে দেয়ার কথা উল্লেখ করে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার দুই বিলেতি বন্ধুর সঙ্গে কথা হলো। গতকাল তারা দুইজনই এ টিকা নিয়েছেন বিলেতে। ওখানেও এ টিকা দিচ্ছে। একই টিকা এখানে দিচ্ছে। সুতরাং টিকা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না।’ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। ‘এটা নিয়ে দ্বিধা থাকার কোন কারণ নেই। অন্য দেশে এ টিকাটি যতটুকু সেইফ, বাংলাদেশেও ততটুকু সেইফ। আমি বলব, যারা ভালনারেবল গ্রুপ রয়েছেন তারা যেন টিকা নিয়ে নেন। আমরা অনেককে হারিয়েছি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত- তাদের একটি বড় অংশই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণী রয়েছে।’

এদিকে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট ‘কোভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৮৪ শতাংশ লোক টিকা নিতে আগ্রহী। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই টিকাদান কর্মসূচী চালুর শুরুতেই টিকা নিতে প্রস্তুত নয়। ৩২ শতাংশ লোক টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিতে চায়, আর বাকি প্রায় ৫২ শতাংশ জনগণ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষা করে টিকা নিতে চায়। বরং কিছুদিন অপেক্ষা করে এই কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তারপর নিতে চায়। আর ১৬ শতাংশ কখনই টিকা নিতে চায় না। পাশাপাশি নারীদের মাঝে টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি। বিনামূল্যে টিকা দেয়া হলে উচ্চ আয়ের মানুষের চেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের টিকা গ্রহণ করার আগ্রহ বেশি দেখা যায়। তবে যদি বিনামূল্যে না দেয়া হয়, তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষরা তুলনামূলকভাবে অনেক কম নিতে চান। গবেষণায় দেশের ৮ বিভাগের ৮ জেলা ও ১৬ উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জনসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় সিস্টেমেটিক দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে জরিপে ৩৫৬০ জন অংশগ্রহণকারী বাছাই করা হয়।

এ বিষয়ে গবেষণা দলের প্রধান ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ জনকণ্ঠকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসে আমাদের টিকা আসছে তিন কোটি ডোজ। আর এই তিন কোটি ডোজ দিয়ে দেড় থেকে দুই কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। কারণ যারা টিকা নেবেন আট সপ্তাহের মধ্যে তাদের আবার দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। আর এখন যদি চার কোটি মানুষ টিকা নিতে চায় তাহলে সরকার কী করবে সেটা চিন্তার বিষয়। আমরা স্বেচ্ছায় আমাদের গবেষণা করেছি। এখন সরকার যদি আমাদের ডাকে, তাহলে আমরা মডেলিং করে দেব আমাদের সে ধরনের ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাসিটি (অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা) আছে।

বেসরকারী নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৪.৬ শতাংশ নাগরিক একটি কার্যকর, নিরাপদ, চিকিৎসক কর্তৃক সুপারিশকৃত টিকা নিতে চায় বিনামূল্যে। ৭.৮ শতাংশ নাগরিক একেবারেই টিকা নিতে ইচ্ছুক নন এবং ১৭.৬ শতাংশ নাগরিক টিকা নেবেন কিনা এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত। ১৮ বছরের উর্ধে ৩ হাজার ৬৪৭ নাগরিকের ওপর পরিচালিত জরিপ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, টিকা নিতে চান না, দ্বিধাগ্রস্ত এ রকম মানুষ বিশ্বেই আছে। আবার টিকা দেয়া শুরু হলে এদের সংখ্যা কমে আসে। টিকার কার্যকারিতা আস্থা বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, কেউ কেউ মনে করেন, টিকার কার্যকারিতা থাকবে ছয় মাস থেকে এক বছর, তাহলে টিকা নিয়ে লাভ কী? এই চিন্তা ঠিক নয়। কারণ, এই সময়ে টিকার কারণে করোনা সংক্রমণ কমে যাবে। ফলে করোনাও কমে যাবে। এক সময়ে করোনা গুরুত্বহীন সর্দি-কাশির মতো হয়ে যাবে। তার মতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকার প্রস্তুতি ভাল। তবে নিবন্ধনের জন্য এ্যাপের বিকল্প থাকতে হবে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও অন্য বিকল্প ডকুমেন্ট গ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন, অনেকেরই এ্যাপ থেকে নিবন্ধন করার মতো ফোন বা প্রযুক্তি নেই। আর যার কোন ডকুমেন্ট নেই, সে যেন ইউপি চেয়ারম্যানের সনদ নিয়ে নিবন্ধিত হতে পারে। বাংলাদেশে বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে মোট তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনছে। তার ৫০ লাখ ডোজ সোমবার এসেছে। এরপর প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ আসবে। আরও হাতে আছে উপহারের ২০ লাখ ডোজ। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে এতদিন দেশের তরুণদের মধ্যে এক ধরনের ভয় ও শঙ্কা ছিল। কিন্তু দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, চিকিৎসকসহ বিশিষ্টজনেরা টিকা নেয়ার কারণে সবার মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তিনি বলেন, আমার ধারণা দেশের বেশিরভাগ মানুষেই টিকা নিতে চায়। সামনের দিনগুলোতে একমাত্র আশার আলো ‘ভ্যাকসিন’।

অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার। এদিকে টিকাদান কার্যক্রমের খবরে অর্থনীতিতেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন অর্থনীতি নিয়ে গভীর চিন্তিত, তখন বাংলাদেশ অধিকাংশ সূচকে ভাল করেছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে দাতা সংস্থাগুলোর আশাবাদ, মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া, রেমিটেন্স ও রিজার্ভের রেকর্ড উচ্চতা, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতিতে আশার আলো জাগিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং রেমিটেন্স দুটিই বেড়েছে। এই সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ এবং রেমিটেন্স সাড়ে ৩৭ শতাংশের বেশি। মূলত আমদানি কমার কারণে রির্জাভ বেড়েছে। যদিও রিজার্ভ স্ফীত হওয়াকে অর্থনীতির দুর্বল লক্ষণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। অপরদিকে, দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং বিশ্বব্যাপী হুন্ডি বন্ধের কারণে রেমিটেন্সের জোয়ার এসেছে।

করোনা ভাইরাসের মহামারী চলাকালীন ভ্যাকসিন ছাড়া অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া যাবে না বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলেই মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে কর্মকাণ্ড গতি পাবে। এটা অনেক দেশই শুরু করেছে, বাংলাদেশেরও শুরু করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়োজন হলো যত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশ থেকে আনা যায়। সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের যোগাযোগ রাখা দরকার। যাতে কোন একক দেশের ওপর নির্ভরশীল না থাকতে হয়। কারণ যত বেশি দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন নিয়ে যোগাযোগ থাকবে তত বেশি ‘বার্গেইনিং পাওয়ার’ থাকবে বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশ যেহেতু সব দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে, সেক্ষেত্রে সব দেশের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার আলোচনা চালানো যেতেই পারে।’

তিনি বলেন, ‘মহামারী মোকাবেলার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বা কূটনীতিক সবকিছুরই সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি মহামারী মোকাবেলা শেষ করতে পারবে তত তাড়াতাড়ি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।’ জানতে চাইলে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে ভাইরাসটিকে বশে আনতে হলে ২০২১ সালে বৃহৎ জনগণকে টিকা দেয়াই হবে মূল চাবিকাঠি। বর্তমানে আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে প্রতিশ্রুতি দেয়া ভ্যাকসিন ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকা।’ তিনি বলেন, ‘কাঠামোগত সংস্কার পুনরুজ্জীবিত করা, মহামারীজনিত কারণে হুমকির সম্মুখীন দক্ষ ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর জন্য নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করা এবং কাউকে পেছনে না রেখে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাই হবে সঙ্কট নিরসনে আমাদের মূল বিষয়।

মহামারী করোনাকালে যেখানে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশে কোন প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে না, সেখানে বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৮ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করছে। এর আগে টানা তিন মাস লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকার পরও গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা দেবে ২০২৪ সালে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২০ সালে পঞ্জিকাবর্ষে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আইএমএফ বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার, একই সময়ে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার। আইএমএফের বরাত দিয়ে মাথাপিছু জিডিপির বিষয়ে অনেকেই বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসাও করছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করা ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল এ্যাফেয়ার্সের (ইউএন ডেসা) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সামান্য হলেও বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ, ভারতের সাত শতাংশ, পাকিস্তানের শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ, ভুটানের তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ, মালদ্বীপের নয় দশমিক নয় শতাংশ, আফগানিস্তানের চার দশমিক চার শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার তিন দশমিক এক শতাংশ। জানা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫.২৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল পৌনে ছয় শতাংশ। মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয় থাকার পেছনে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যপণ্যের দাম সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে বলে ধারণা করা হয়। গত এক দশকের ব্যবধানে দেশে মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ ডলার। এ ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাল করেছে। চলতি বছর আরেকটি সুখবর অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। ২০১৮ সালেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। তিন বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জনের ঘোষণা আসতে পারে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) আগামী ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে বসবে। জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি বিভিন্ন দিক দিয়েই ধাক্কা খেয়েছে। কর্মসংস্থান, মানুয়ের আয়, অর্থনৈতিক অবস্থা- সবদিক থেকেই। অর্থাৎ অর্থনীতিক বিপর্যয়।

খবরটি 957 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen