অর্থনীতি ডেস্ক: করোনার প্রভাব মোকাবিলায় শিগগিরই আসছে দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ। এতে থাকবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য আরও একটি নতুন তহবিল। তবে এবার এসএমইর সঙ্গে যুক্ত করা হবে অতি ক্ষুদ্র খাতকেও। কোনো ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন তহবিলের অর্থ বিতরণ করা হবে না। মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট (এমএফআই) ও বিসিকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিতরণ করবে।পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। বিশেষ করে ২শ উপজেলার সব বয়স্ক মানুষ ও বিধবা নারীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এরই মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে এসএমই খাতের জন্য। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এরই মধ্যে চলে আসে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। এ ধাক্কা সামাল দেয়ার জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম প্যাকেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি খাত মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এজন্য দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তাদের জন্য নতুন একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এর অর্থায়ন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে। তহবিলের অর্থ প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবার আড়াই শতাংশ সুদে সেটি বিতরণ করবে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা (এমএফআই) ও অন্যান্য ঋণ সংস্থার কাছে। এসব সংস্থা ওই তহিবলের অর্থ গ্রাহককে ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ দেয়া হবে। তবে তহবিলের মেয়াদ হবে ৫ বছর। এছাড়া তহবিল থেকে ৪০ শতাংশ ঋণ দেয়া হবে ট্রেডিং খাতে এবং ৬০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবামুখী অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের। এ তহবিল থেকে একক বা গ্রুপ পর্যায়ে ঋণ নেয়া যাবে। এখান থেকে কুঠির শিল্পোদ্যোক্তা পর্যায়ে পাবেন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা, ছোট উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং মাঝারিসহ অন্য উদ্যোক্তারা পাবেন সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। ঋণ পাওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবেন যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অধিদফতর, বিসিকসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, বিদেশ বা শহরে ফেরত আসা উদ্যোক্তারা। দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এজন্য ২শ উপজেলার সব বয়স্কদের ভাতা দেয়া হবে। আরও দেয়া হবে বিধবা নারীদের। এ প্যাকেজের আওতায় অতি দরিদ্রদের ভাতা দেয়া হবে। প্রায় ১৫ লাখ নতুন অতি দরিদ্রকে এ প্যাকেজের আওতায় সুবিধা দেয়া হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এসএমই খাতকে। কারণ প্রথম প্যাকেজে এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলো প্যাকেজের অর্থ খুব বেশি এসএমই খাতে বিতরণ করতে পারেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রথম প্যাকেজ থেকে সুবিধা নিতে পেরেছে কম। এজন্য অর্থ বিতরণ কৌশল পরিবর্তন করে এসএমই খাতের জন্য পৃথক তহবিল ঘোষণা দেয়া হবে। এটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসএমই খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের দরকার আছে। তবে বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। প্রথম প্যাকেজ মাথায় রেখেই অর্থ বিতরণ পদ্ধতি নির্বাচন করা উচিত। তিনি আরও বলেন, গরিব মানুষকে সরাসরি অর্থ দেয়া ভালো। তবে গুরুত্ব দেয়া উচিত যারা চাকরি হারিয়েছেন। তৈরি পোশাক খাতের দিকেও নজর রাখা দরকার।

জানতে চাইলে বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে ঋণ পেতে বড় সমস্যা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে এটি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কাজেই তাদের সহায়তা দরকার। তিনি আরও বলেন, প্রথম প্যাকেজে বড় শিল্পসহ অন্যান্য খাতে যে প্যাকেজ ঋণ ঘোষণা দিয়েছে সেখানে সুদের হার কম। ছোট খাতগুলো আরও বেশি সুযোগ দেয়া দরকার। কারণ অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি খাত কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

খবরটি 1,122 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen