স্বাস্থ‍্য ডেস্ক: রিজিয়া খাতুন। অন্যের ঘরে কাজ করে সংসার চালান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীও তিনি। সাতক্ষীরা পৌরসভা এলাকার গড়ের কান্দার গৃহকর্মী রিজিয়ার স্বামী মনিরুল গাজী কথা বলতে পারেন না। এ ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এই প্রতিবন্ধী মানুষটির। তাদের মেয়ে ছনিয়া খাতুন (১৪) জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী। হাত-পা বাঁকা হওয়ায় হাঁটতে পারে না সে। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরানো রিজিয়া তার চিকিৎসা করবেন কী করে? প্রতিবন্ধী এ পরিবারের চিকিৎসার ভার নিয়েছে আহ্‌ছানিয়া মিশন। প্রতিষ্ঠানটির ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে এখন হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছনিয়া খাতুন (১৪) ও মনিরুল গাজী।
দক্ষিণের সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলা সাতক্ষীরার এমন অনেক মানুষের পাশেই দাঁড়িয়েছে আহ্‌ছানিয়া মিশন। জোয়ার-ভাটা ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে ওঠানামা করে উপকূলের এই মানুষদের জীবন-জীবিকা। জোয়ারের পানিতে বাপ-দাদার ভিটা ডুবে যায়, ঘূর্ণিঝড়ে ঘর উড়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করা নিম্নবিত্ত মানুষকে মাথা গুঁজতে হয় রাস্তার পাশে; ভাগ্য ভালো থাকলে কোনো আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় জোটে তাদের। শহরের ৪৭টি বস্তিও উদ্বাস্তুদের মাথা গোঁজার অন্যতম স্থান। এই দরিদ্র মানুষদের ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এগিয়ে এসেছে আহছানিয়া মিশন। সাভার ও সাতক্ষীরা পৌরসভা এলাকায় ২০১৮ সাল থেকে ৬৪১৭টি পরিবারের ২৫ হাজার ৩৬৫ জন উপকারভোগীকে ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশন। এই প্রকল্পের ভাউচার কার্ড কিউআর কোড সংবলিত। এটি ডিজিটাল অ্যাপস ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। দরিদ্র, হতদরিদ্র ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারকে ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে ‘হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন ভাউচার স্কিম ফর পুওর, এক্সট্রিম পুওর অ্যান্ড সোশ্যালি এক্সক্লুডেড পিপল (পেপসেপ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন, প্রসব-পরবর্তী সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নবজাতকের যত্ন ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা; বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা; মা ও নবজাতক শিশুর পুষ্টি; পরিবার পরিকল্পনা; সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং মা ও শিশুর টিকা-সংক্রান্ত সেবাও তাদের দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। রেফারেল সুবিধার আওতায় উপকারভোগীরা সরকারি হাসপাতাল থেকেও স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন।
ঢাকার সাভারের ভ্যানচালকের স্ত্রী বন্যা আক্তার। প্রায়ই কাজ জোটে না তার স্বামীর। সংসার চলে জোড়াতালি দিয়ে। কয়েকদিন আগে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে কোলজুড়ে এক ছেলে এসেছে তার। মিশনের ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে হাসপাতালের সব বিল শোধ করেছেন তিনি। সুস্থও আছেন মা-ছেলে উভয়ে।
তবে এ স্বাস্থ্যসেবায় অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত না থাকায় অনেকেরই জরুরি চিকিৎসা সেবা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভোগান্তিতে পড়ছেন দরিদ্র পরিবারগুলোর মা, শিশু ও বৃদ্ধরা। তা ছাড়া কার্ডের নির্ধারিত বাজেট শেষ হয়ে গেলে পরে আর চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব হয় না তাদের। যেমন, সাতক্ষীরার প্রতিবন্ধী শাহিনুল গাজীর পরিবারের সদস্য চারজন। তার স্ত্রী শাহনূর কাজ করেন অন্যের বাড়িতে। এ বছরের শুরুতে তার প্রতিবন্ধী স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান তিনি। কিন্তু সেখানে রোগী দেখাতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাকে। তাছাড়া জটিল এ রোগের সব এ ওষুধ মিশন থেকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদেরও সামর্থ্য নেই কেনার।

সাতক্ষীরার আনোয়ারা মেমোরিয়াল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক হাবিবুর রহমান জানান, মিশনের এ প্রজেক্টটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনা পয়সায় সিলেকশনের মাধ্যমে হতদরিদ্ররা চিকিৎসা পাচ্ছে। কার্ডধারীরা এলে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য নির্ধারিত ডিসপেনসারি রয়েছে। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তারা সেখান থেকে ওষুধ নেয়। মেডিকেল টেস্টও এ বাজেট থেকে করা হয়। মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব রকম চিকিৎসা করা হয়।
এরিয়া ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পে ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ, ডায়াগনস্টিক সার্ভিস, ওষুধ ও রেফারেল সেবার কাজ করা হয়। সেবাগ্রহীতাদের আচরণ পরিবর্তন ও সচেতনতার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হয়। তাদের পুষ্টিসেবা নিশ্চিতের জন্য সবজির বীজ দিয়ে চাষাবাদে উৎসাহিত করা হয়। এ কার্ডের ১০ হাজার টাকার বাইরে প্রসবের সময়ে মাদের আরও ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।

খবরটি 714 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen