জাতীয় ডেস্ক: বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী। তাদের পেশাদারিত্ব এবং কর্মদক্ষতা ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। শনিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২০ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলে একযোগে প্রচার করা হয়।

সরকার প্রধান ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে আজকের এই দিনটি এক বিশেষ গৌরবময় স্থান দখল করে আছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা যৌথভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করেন। সম্মিলিত আক্রমণের মুখে শত্রুবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের প্রতিটি অঞ্চলে লক-ডাউন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে মহামারি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিবর্গের জন্য কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করে যাচ্ছে। এছাড়াও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকার সমন্বিত করোনাভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নানাবিধ কার্যক্রমও অত্যন্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, মালদ্বীপের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া চিকিৎসা সামগ্রী নৌবাহিনীর জাহাজে করে সেখানে পাঠানো হয়। এছাড়াও জাতিসংঘে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বিজয়’ লেবাননের বৈরুতে বসবাসরত বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে। আমাদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিশিষ্টজনসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করেছে। তিনি বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি অবদান রেখে চলেছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যাঁরা অসুস্থ, তাঁদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক দশকে আমরা সশ্রস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখাকে আধুনিক সমরাস্ত্র এবং উপকরণ দ্বারা সমৃদ্ধ করেছি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, আমাদের সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী যে পরিমাণ আধুনিকায়ন হয়েছে অতীতে কোনও সময়েই তা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুটি পদাতিক ব্রিগেড, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন, সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য একটি কম্পোজিট ব্রিগেড, স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন ছাড়াও ১০টি ব্যাটালিয়ন, এনডিসি, বিপসট, এ.এফ.এম.সি, এম.আই.এস.টি, এনসিও’স একাডেমি ও বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর্থ-সামজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সুপরিচিত নাম। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে অনেক উন্নত এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ যখন ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে, তখনও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রবাসী আয়, কৃষি উৎপাদন এবং রফতানি বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে।’ তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম এবং পেশাগত দক্ষতায় বলীয়ান হয়ে দেশের প্রতিরক্ষা এবং দেশ গড়ার কাজে আরও বেশি অবদান রাখায় আহ্বান জানান।

খবরটি 544 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen