ফিচার ডেস্ক: দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল মিরসরাইর বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের ১০০ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন নয়নাভিরাম ‘শেখ হাসিনা সরোবর’। আর এ সরোবরের পাড়ে নির্মিত হবে দুটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারকা হোটেল ও একটি রিসোর্ট। সঙ্গে থাকবে বিনোদনের নানা অনুষঙ্গ। সেখানে গড়ে তোলা হবে নান্দনিক পর্যটন কেন্দ্র ও দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। থাকবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের নানা উদ্যোগ। ইতিমধ্যে সরোবর খনন ও ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। চলছে সরোবর নির্মাণের অপরাপর কাজ। প্রাথমিকভাবে দুটি সরোবর হবে ১০০ একরে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন (বেজা) দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল-খ্যাত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে সরোবরটি নির্মাণ করছে।

            জানা যায়, ৩০ হাজার একর জমিতে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। চট্টগ্রামের সীতাকু ও মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। চট্টগ্রাম বন্দরের অনতিদূরে সমুদ্র উপকূলে গড়ে ওঠা এ শিল্পনগরে ২৫টি আলাদা জোন নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের সাধুরচর, শীলচর, মোশাররফচর ও পীরেরচর এলাকা, ফেনীর সোনাগাজী ও সীতাকু অংশের ধু-ধু চরাঞ্চলজুড়ে দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপান। মাটি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে একের পর এক শিল্পপ্লট। নির্মিত হচ্ছে ছোট-বড় নানা অবকাঠামো, বিস্তৃত পিচঢালা পথ ও ভাঙন-প্রতিরোধী বাঁধ। প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতে ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে চার লেনের ১০ কিলোমিটারের সংযোগ সড়কসহ অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের জন্য স্থাপন করা হচ্ছে আলাদা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নির্মাণ করা হবে জাহাজ টার্মিনাল। স্থাপন করা হচ্ছে সুপেয় পানি সরবরাহে গভীর নলকূপ।

            বেজা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শুরু করে বেজা। পরে ২০১৯ সালের ৪ মার্চ শেখ হাসিনা সরোবর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের ২১২ একরের মধ্যে ১০০ একরে থাকবে জলাধার বা হ্রদ। অবশিষ্ট ১১২ একরে নির্মাণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারকা হোটেল ও রিসোর্টসহ কয়েকটি স্থাপনা। হোটেলের উচ্চতা হবে ২২ তলা। এসব হোটেল ও রিসোর্টে থাকবে বিনোদনের ব্যবস্থা। সরোবরের মধ্যে থাকবে হাউস বোটসহ ওয়াটার ট্যুরিজমের ব্যবস্থা। সরোবরের পাড়ে স্থাপন করা হবে জাদুঘর, শপিং কমপ্লেক্স, সিনেমা হল ও বিনোদন কেন্দ্র। বর্ষা মৌসুমে থাকবে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা। শুষ্ক মৌসুমে তা অর্থনৈতিক অঞ্চলের অন্যান্য অংশের কাজে ব্যবহৃত হবে। সরোবরের দুই ধারে বনায়ন থাকবে। থাকবে বন্যপ্রাণী ও পাখির অভয়াশ্রম। থাকবে হাঁটার পথ ও ব্যায়ামাগারসহ আনুষঙ্গিক নানা ব্যবস্থা। থাকবে ৩৫০ ফুট উঁচু পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া শিল্পনগরে নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ হাসিনা সরণি।

            বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জলাধার এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অবকাঠামো তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আলোকে সরোবর নির্মাণ করা হচ্ছে। পানির সংকট নিরসন, পর্যটন স্পট তৈরিসহ হ্রদের বহুমাত্রিক সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে পুরো জোনের পরিবেশকে সুরক্ষা দেবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দুটি সরোবর নির্মাণ করা হবে। প্রথমটির খনন ও ভূমি উন্নয়ন কাজ ৫০ ভাগ শেষ। আশা করি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ সরোবরে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে পরে সেই সুপেয় পানি শুষ্ক মৌসুমে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা যাবে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা সরোবর তৈরি হলে এখানে নান্দনিক পর্যটক স্পট গড়ে উঠবে।

খবরটি 805 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen