ফিচার ডেস্ক: বেদনাবিধুর আগস্ট। এ মাসে জাতি হারিয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাঙালিকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলছিলেন, ঠিক সেই সময় স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকের বুলেটের নির্মম আঘাতে প্রাণ হারান তিনি। বাঙালি জাতির জনক হত্যার এ মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও কৃতজ্ঞচিত্তে মাসব্যাপী পালন করা হচ্ছে শোকের নানা কর্মসূচি। স্বাধীনতার পর দেশে সমস্যার কোনো অন্ত ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে ছিল না অবকাঠামো ব্যবস্থা। অর্থনীতির অবস্থাও ছিল করুণ। এ অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও দৃঢ় পরিচালনায় দেশ একটি সুন্দর গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল। জাতির জনকের দূরদর্শিতায় ১৯৭৪-এর প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থা মোকাবেলাও আমরা করেছি, কিন্তু মানুষের ভেতর উদ্দীপনা ছিল, সহনশীলতা ছিল, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ছিল এবং অসাম্প্রদায়িক একটা চেতনাও ছিল।

কিন্তু তার হত্যা সেখান থেকে একটা বড় বিচ্যুতি ঘটিয়েছিল। দেশে চেপে বসেছিল স্বৈরশাসন। জাতির টুঁটি চেপে ধরেছিল সাম্প্রদায়িকতা। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে ফিরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেশে জেঁকে বসে পুঁজিবাদের শাসন, বাড়তে থাকে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা এবং সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। এরপর দশটি বছরও পার হয়নি, আমরা গণতন্ত্র হারিয়েছি। সমাজতন্ত্রের আদর্শ হয় ভূলুণ্ঠিত। সমাজে বিত্তশালী ও ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে আর প্রভাব-প্রতিপত্তি হয় দীর্ঘস্থায়ী। বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিল। তার কিছু কিছু বাস্তবায়ন স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অধরাই রয়ে গেছে। দেশের ভেতরে নানা অপশক্তির তৎপরতা, নৈতিকতা-মূল্যবোধ-সততা ও আদর্শহীন কিছু মানুষের ক্ষমতা এবং বিত্তের প্রতি লোভ থমকে দেয় বাঙালির মর্যাদাশীল জাতি হওয়ার স্বপ্ন।

বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগেও ধরা দেয় ভাঙন। ক্ষমতালিপ্সুরা দল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির সঙ্গে যোগ দেয়। কেউ কেউ জেল-জুলুমের শিকার হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। গুটিকয়েক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত হন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল দেশটি আত্মনির্ভরশীল হবে। মানুষ দু’বেলা আহার পাবে, মাথার ওপর চাল থাকবে, শিক্ষিত হবে, সব মানুষের কর্মসংস্থান ও সুস্বাস্থ্য থাকবে এবং সমাজে সংহতি থাকবে। অনেক দেরিতে হলেও দেশটি সেদিকে যাত্রা করছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুনরায় বিনির্মাণের কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ দেশের আপামর মানুষ সেই স্বপ্নের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দেশের উন্নতিকল্পে কাজ শুরু করেন। এমন এক সময় গেছে যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করা যেত না। তার হত্যার বিচার চাওয়ার সুযোগ ছিল না। তার যে ভাষণ আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ তা বাজাতে দেয়া হতো না। কিন্তু দেশে আবার ফিরে এসেছে মুজিববাদ, মুজিবচর্চা। ’৯৬ সালে সরকারে এসে মাঝখানে পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে ২০০৯ থেকে টানা দশ বছর সরকার পরিচালনা করে এগারো বছর পার করতে চলেছেন শেখ হাসিনা। এ দেশের মানুষও তার নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর ‘ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত-উন্নত-সমৃদ্ধ’ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণে কাজ করছে। দেশ ইতিমধ্যে পরিণত হয়েছে ‘নিম্নমধ্যম’ আয়ের দেশে। বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা ২০২১ সালে মধ্যম এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণায় শামিল হয়ে চলছে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ।

জনগণের ওপর রাষ্ট্রের নিপীড়নকে ঘৃণা করতেন বঙ্গবন্ধু। বিনা বিচারে মানুষকে অন্তরীণ রাখাকে তিনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করতেন। দুঃখী মানুষের জন্য তার সমবেদনা ছিল এবং যারা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দুর্বলের ওপর অত্যাচার করে তাদের প্রতি তিনি ক্ষমাহীন ছিলেন।

খবরটি 669 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen